আমি (লেখক) কৃষক পরিবারের সন্তান। ১৯৬৫ সালের দিকে ইরি জাতের ধানের আবাদ শুরু হলে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন সারের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করেছি । ক্ষেতে ইউরিয়া ব্যবহারের দিন দশকের মধ্যেই ধানের গাছ কিভাবে দ্রুত উন্নতি লাভ করে তা দেখে কৃষকরা অভিভূত । তাই এ সার ব্যবহারে এক ধরনের প্রতিযোগিতা দেখছি কৃষকদের মধ্যে। ধানে ও অন্য ফসলে কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার না করলে রোগ-বালাই বাড়ে । তাই নামমাত্র মূল্যে বিক্রয় হওয়া কীটনাশক ঔষধ ছিটানো হয়েছে মাত্রাতিরিক্তভাবে । ক্ষতি কী হয়েছে তখন তা এতটা নজরে আসেনি । তবে খাল-বিলসহ, নদ-নদীর মাছ, ব্যাঙসহ জলজ প্রাণী, ভালো-পোকা-মাকড় এমন কী পাখীও মরেছে ব্যাপক হারে। ক্ষতিকর DDT পাউডার ময়দা নাড়ার মত ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে বেগুনের জমিতে ছিটিয়েছি- সে দৃশ্যও মনে পড়ে । এর কুফল নতুন নতুন রোগ বালাইয়ের মধ্য দিয়ে মানুষ এখন প্রত্যক্ষ করছে। এখন মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে হাইব্রিড জাতীয় বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হচ্ছে । দ্রুত ফলন বৃদ্ধির জন্য গাছে থাকা কলা, আমসহ সর্বত্র স্প্রে করা হচ্ছে, স্বাভাবিক বৃদ্ধি থামাতেও ক্ষতিকর রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে। এগুলো যে মানুষের জীবনের জন্য কত বড় ক্ষতিকর তা উৎপাদনকারীরা কে কতটা বুঝছে কে জানে?
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে রাসায়নিক ব্যবহার আধুনিক চাষাবাদের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ । জমির পরিমাণ বাড়ছে না অথচ অনেক বেশি ফসল চায়। সেজন্য ফসলের নতুন নতুন জাত আবিষ্কারে গবেষক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমনি চেষ্টা চালাচ্ছে তেমনি অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও হরমোন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হচ্ছে । এতে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে ঠিকই কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমনি মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে তার ক্ষতিকর প্রভাব উৎপাদিত ফসলের মধ্যেও এসে যাচ্ছে । যা মানুষের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্ম দিচ্ছে । তরি-তরকারি ও ফলমূলে এ জাতীয় ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাব পড়ছে অনেক বেশি। শাক-সব্জীতে এ ধরনের রাসায়নিক স্প্রে করার পর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এগুলো সংগ্রহ করে খাওয়ার কারণে তা শরীরে যেয়ে পৌঁছাচ্ছে। এতে পরিপাক তন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে। ফসলে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ফলমূলে স্প্রে করায় তা খেয়ে মানুষের হরমোনেও নানান ধরনের অসঙ্গতির সৃষ্টি করছে। সবমিলিয়ে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের দরকারি পোকা-মাকড় ও জলজ প্রাণির সাথে মানুষের জীবনেও মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে কিডনি ফেইলিওর (Failure), লিভার সিরোসিস, ব্লাড প্রেসারসহ বড়-ছোট নানান ধরনের রোগ। অসচেতনভাবে এ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করতে যেয়ে কৃষকের শ্বাস-প্রশ্বাসে তা শরীরের ভিতরে যেয়েও ঘাতক ব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে । ত্বকেও দেখা দিচ্ছে নানান সমস্যা । তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে এ ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার প্রয়োজনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা ও ব্যবহারে সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি ।
আরও দেখুন...